
বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি)। এখন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সকল কোম্পানিকে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি ব্যবসায়িক পরিচিতি নম্বর নিতে হবে। এমনকি যারা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করবেন তাদেরও এই আইডি লাগবে বৈধভাবে ব্যবসা করার জন্য।
এর নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল-কমার্স বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ডিবিআইডি।
এজন্য ডিবিআইডি নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলে বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও এখনো প্লে-স্টোরে সেই অ্যাপ দেখা যাচ্ছে না। এখন ওয়েবপেইজে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
নিবন্ধন কেন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ?
ই-কমার্স খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও প্রতারণা ঠেকাতে সেপ্টেম্বর মাসে সরকার একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেসময়ই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে এ খাতের উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, এই নিবন্ধনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে পরিচিতি নম্বর ধরে সরকার উদ্যোক্তার কর্মকাণ্ড ‘ট্র্যাক’ করতে পারবে।
“তারা কে কী কাজ করছে তা সরকার জানত না। তারা বৈধভাবে কাজ করছে কি না, কিংবা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে কি না বা কোন অনিয়ম হচ্ছে কি না, সেটা আগে দেখা সম্ভব ছিল না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য। কিন্তু এখন আমরা তাদের কাজ ট্র্যাক করতে এবং মনিটর করতে পারবো,” বলছেন মি. সফিকুজ্জামান।
শুরুতে এটি হবার কথা ছিল ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন বা ইউবিআইডি। কিন্তু পরে সেটি বদলে ডিবিআইডি করা হয়।
তিনি কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে, “ইউবিআইডি করার চিন্তা থেকে আপাতত আমরা সরে এসেছি। কারণ আমাদের অনেক ই-কমার্স উদ্যোক্তা আছেন যাদের ট্রেড লাইসেন্স নেই, কেউ আছেন যারা ফেসবুকে ছোট আকারে ব্যবসা করেন, তাদের ইউনিক বিজনেস আইডি দেয়া যেত না। সে কারণে সবাইকে যাতে আমরা সাধারণভাবে নিবন্ধন দিতে পারি সেজন্য এটিকে আরো সরল করে ডিবিআইডি করা হয়েছে।”
এখন এই নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মি. সফিকুজ্জামান বলেছেন, এখন থেকে কোন ই-কমার্স উদ্যোক্তার যদি ডিবিআইডি না থাকে তাহলে তাকে বৈধতার স্বীকৃতি দেবে না সরকার।
যেভাবে নিবন্ধন করবেন একজন উদ্যোক্তা?
একজন উদ্যোক্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পেইজ (এখানে ক্লিক করুন), বা যৌথ-মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসি’র পেইজ অথবা মাইগভ ডট বিডিতে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পেইজে অভ্যন্তরীণ ই-সেবাসমূহ কলামের নিচে রয়েছে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের লিংক। এতে ক্লিক করলে সেটি নিয়ে যাবে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য আবেদন নামে একটি পেজে।
এখানে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা এবং আবেদন ফরম পূরণের নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
নিবন্ধনের জন্য একজন উদ্যোক্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি দিতে হবে।
এছাড়া বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু দিতে পারলে ভালো হয় এমন কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে—আবেদনকারীর স্বাক্ষর, আয়কর নিবন্ধন নম্বর বা টিআইএন, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর, বাড়ির মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র, এবং ভাড়া অফিসের ক্ষেত্রে বাড়ি ফ্ল্যাটের মালিকের সাথে সম্পাদিত চুক্তির দলিলের সত্যায়িত কপি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মি. সফিকুজ্জামান বলেছেন, কেউ যদি নিবন্ধনের সময় সব কয়টি ঘর পূরণ করতে পারেন, তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবেন এবং তৎক্ষণাৎ নিজের নিবন্ধন নম্বর পেয়ে যাবেন।
যাদের টিআইএন, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ট্রেড লাইসেন্স বা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর থাকবে না, তাদের নিবন্ধিত হতে সময় লাগবে। ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের সময়সীমা বলা হয়েছে ৩০ দিন।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ৩০দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে কি না।